শবে বরাতের রাতের ফজিলত ও আমল

আমাদের জন্য যে মহিমান্বিত রজনী গুলোর কথা আল্লাহ তা’আলা আমাদের জানিয়েছেন তার মধ্যে শবে বরাত হচ্ছে একটি। এটি এমন একটি রাত যে রাতে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার অনেক কাছে যাওয়া যায় এবং আল্লাহ তা’আলা নিজে তার পক্ষ থেকে অনেক রহমত বর্ষণ করে আমাদের উপর এই রাতে। তাই আমরা যারা আমল করতে পছন্দ করি তারা সব সময় শবে বরাতকে কাজে লাগাতে পারি।

হাদিস এবং সুন্নাহর আলোকে আমরা আজকে আলোচনা করার চেষ্টা করব শবে বরাতের বিভিন্ন আমলে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ রাতে একজন মুমিন এবং ঈমানদার বান্দা এবং বান্দী কি কি আমল করতে পারে সে সম্পর্কে। আশা করবো আপনারা আমাদের এখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সংগ্রহ করবেন এবং আমাদের এখানে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে যায় তাহলে কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাদের সতর্ক করবেন।

শবে বরাতের ফজিলত

শাবান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস এবং এই সাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবারগত রাতকে বলা হয় শবে বরাত। এই শবেবরাতের রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত।

এ সম্পর্কে একটি হাদিস রয়েছে এবং সেই হাদিসে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়লো; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন হে আয়েশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা? নবীজি বললেন তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই ভাল জানে। তখন নবীজি বললেন এটা হল অর্ধ সাবানের রাত এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন; অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিশ্বের প্রশনকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন (সু আবুল ঈমান তৃতীয় খন্ড পৃষ্ঠা ৩৮২)

উপরের হাদিস থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছি যে শবেবরাত আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি আমলের রাত এবং এই রাতে আমরা যদি আমল করতে পারি আল্লাহ তা’আলা আমাদের কথা সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পারবেন এবং আমাদের ক্ষমা চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহতালা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।

শবে বরাতের নফল নামাজ ও ইবাদত করার নিয়ম

শবে বরাত কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে আমরা সকলে জানালাম এখন আমরা জানার চেষ্টা করব শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদত সম্পর্কে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই প্রসঙ্গে বলেছেন”যখন সাবানের মধ্য দিবস আসবে তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে” (ইবনে মাজাহ)।

উপরের এই ছোট্ট হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শবে বরাতকে কেন্দ্র করে দুইটি নফল ইবাদতের কথা উল্লেখ করেছেন। যার মধ্যে একটি হচ্ছে রাত জেগে নফল নামাজ এবং দিনের বেলা রোজা পালন করা।

তাই শবে বরাতের রাতে আমরা চেষ্টা করব পুরো রাত জেগে নফল নামাজ এবং নফল ইবাদত গুলো করতে। এবং ভোরবেলায় সাহরির মাধ্যমে পরের দিনের রোজা রাখার জন্য নিয়ত করতে এবং সারাদিন রোজা রাখতে।

এবার তাদের জন্মদিন অপেক্ষার রাত শ্রেষ্ঠ তাই আমরা চেষ্টা করব রাতের বেলাতে বেশি বেশি ইবাদত করতে। এখানে আরেকটি হাদিস পাওয়া গেছে যে হাদিসে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ১৪০০ সাল দিবাগত রাত যখন আসে তখন তোমরা এ রাত্রি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন কোন ক্ষমা প্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোন রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিযিক দেব; আছ কি বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব; এভাবে ভোট পর্যন্ত আল্লাহতালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন”(ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বার ১৩৮৪)।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *