শাওয়াল মাসের আমলসমূহ হাদিসের আলোকে

আমরা সকলেই জানি যে রমজান মাসের পরে শাওয়াল মাস আসে অর্থাৎ রমজান মাসে যখন ইবাদত করতে করতে বান্দারা ইবাদতের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখনই শাওয়াল মাসের আবির্ভাব হয়। কিন্তু এই মাসে ইবাদত এর একটি পরিবর্তন হওয়ার কারণে অনেক বান্দা ইবাদত থেকে অনেক বেশি দূরে চলে যায়। সেই বান্দাদের পুনরায় ইবাদতে ফিরিয়ে আনার জন্য আল্লাহ তা’আলা এই মাসে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল করতে বলেছেন।

আমরা যদি মুমিন ও ঈমানদার ব্যক্তি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই শাওয়াল মাসকে কাজে লাগাবো এবং নিজের আমলনামাকে সুন্দরভাবে সাজাবো। আজকে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করবো হাদিসের আলোকে শাওয়াল মাসের আমল গুলো সম্পর্কে জানতে এবং এর বাইরে যদি আপনাদের কিছু জানার থাকে বা আপনারা এর বাইরে যদি অতিরিক্ত আমার সম্পর্কে জানেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাদের অবগত করবেন।

শাওয়াল মাসের আমল ও ছয় রোজার ফজিলত

শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা করতে হয় এবং সেই ছয়টি রোজার মাধ্যমে কি কি ফজিলত আপনি পেতে পারেন সে সম্পর্কে আমরা আজকে জানার চেষ্টা করব। সবার প্রথমে জানিয়ে দিয়ে যে শাওয়াল মাসের যে ছয়টি রোজা আমাদের করতে হয় সেই ছয়টি রোজা করা হচ্ছে সুন্নত। এত প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই রোজা রাখতেন এবং তিনি আমাদের রোজা রাখতে বলেন।

এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন”যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং সালালে আরো ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন পূর্ণ বছরের রোজা পালন করল”(মুসলিম ১১৬৪, আবু দাউদ 2433, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাসা, সহি আলবানী)। এই হাদিসটি যদি গভীরভাবে আমরা ভাবতে যাই তাহলে বুঝতে পারবে এখানে কি বোঝানো হয়েছে।

সাধারণত চন্দ্র মাস হিসেবে এক বছর সমান সমান 354 বা 355 দিন হয় এবং প্রত্যেকটি নেক আমলের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কমপক্ষে দশ গুণ সব বাড়িয়ে দেবেন সেটা উল্লেখ করেছেন। এই ঘোষণাটি আমরা পেয়েছি সূরা আন আমতাম আয়াত 160 থেকে। তাই যদি আমরা রমজান মাসের পুরো ৩০ দিন ফরজ রোজা পালন করে সেটা ১০ গুণ হয়ে দাঁড়াবে ৩০০ দিন এর সমান। এবং আমরা যদি শাওয়াল মাসে পুনরায় ছয়টি সুন্নত রোজা পালন করি তাহলে সেটা ১০ গুণ হয়ে হবে ৬০ দিনের রোজার সমান।

এখন যদি আমরা দুইটা রোজা এক জায়গাতে করি তাহলে প্রায় 360 দিন রোজা রাখার সমান সব আমাদের আল্লাহ তাআলা দিবেন। তাই এই হিসাব থেকে আমাদের প্রিয় নবী যে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন সেটা একেবারেই সত্যি।

এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন”আল্লাহ তাআলা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসের ছয় দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন”।

একজন ঈমানদার মুমিন ব্যক্তি হিসেবে শাওয়াল মাসে রোজা পালন করাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা উপরের আলোচনা থেকে জানতে পেরেছি। আপনি পুরো শাওয়াল মাসের যেকোনো সময় এই রোজাগুলো করতে পারেন মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়েও এ রোজা করতে পারেন। সঠিকভাবে যদি আমরা ছয়টি রোজা পালন করতে পারি তাহলে আমাদের আমল নামায় প্রচুর পরিমাণে সওয়াব যুক্ত হবে যেটা আমাদের পরকালে অত্যন্ত উপকারে আসবে।

শুধুমাত্র যে ঘোষিত এই আমলগুলো আপনারা করবেন এমন নয় এর পাশাপাশি ফরজ সালাত থেকে শুরু করে সকল নফল ইবাদত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া এবং মনে মনে সব সময় তওবা ইস্তেগফার এবং দুরুদ পাঠ করা শাওয়াল মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলোর মধ্যে কয়েকটি। আশা করছি আপনারা শাওয়াল মাসের আমল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *