কোরবানির আমল কি কি

মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত আনন্দের দিন হচ্ছে কোরবানির ঈদের দিন। তবে যারা কেবল কোরবানির ঈদের দিনে শুধুমাত্র আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকবেন তারা অত্যন্ত কোরবানির কাজ করবেন তার কারণ হলো এই কোরবানির দিনে অবশ্যই এমন কিছু আমল আছে যে আমল গুলো আপনি করলে আল্লাহ তা’আলা আপনার উপর অনেক বেশি খুশি হবেন।

কোরবানির আমলগুলো সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করবে এবং জানার চেষ্টাও করবো এই আমলগুলো দ্বারা কিভাবে আমরা আমাদের জীবনকে সাজাতে পারি। কোরবানি আমার সম্পর্কে নিজে হাদিস কোরআনের আলোকে বিভিন্ন তথ্য বর্ণনা করার চেষ্টা করব।

কোরবানির দিনের আমলসমূহ

১. কুরআন তেলাওয়াত করা
কুরবানির আগে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা এ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল। এমনিতেই যতবেশি সম্ভব কুরআন পড়া উত্তম। আল্লাহ তাআলা এ দিনগুলোতে বেশি বেশি ভালো কাজ করা বা ইবাদত করাকে ভালোবাসেন। যদি কেউ সুযোগ না পায়; অল্প হলেও কুরআন তেলাওয়াত করা।

২. নফল নামাজ বাড়িয়ে পড়া
প্রতিদিনের ফরজ নামাজের সঙ্গে সঙ্গে কুরবানির এ দশকে যতবেশি সম্ভব নফল নামাজ পড়া উত্তম। তাই ভালো কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। তা হতে পারে ইশরাক, চাশত, তাহাজ্জুদসহ দিন ও রাতের যে কোনো সময়ে নফল নামাজ।

৩. জিকির করা
দিনভর চলাফেরা-ওঠাবসায় বেশি বেশি জিকির করা। কেননা এ দশকের তাকবির, তাহলিল, তাহমিদ- মূলত এগুলো সবই মহান আল্লাহ তাআলার জিকির। এ জন্য বেশি বেশি জিকির ও তাসবিহ পড়া। বিশেষ করে-
> اَللهُ اَكْبَر আল্লাহু আকবার; আল্লাহ মহান।
> اَلْحَمْدُ للهِ আলহামদুলিল্লাহ ; সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
> لَا اِلَهَ اِلله লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।
> سُبْحَانَ الله সুবহানাল্লাহ ; মহান আল্লাহ পবিত্র।

৪. রোজা রাখা
কুরবানির আগ পর্যন্ত রোজা রাখা। বিশেষ করে আরাফার দিনে রোজা পালনের মর্যাদা অনেক বেশি। এ দিনগুলোতে রোজা পালনকে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াবের ঘোষণা এসেছে হাদিসে। তাই কুরবানির আগে রোজা রাখা উত্তম।

বিজ্ঞাপন

৫. দান করা
দান করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল। হাদিসের অনেক বর্ণনায় দনের ফজিলত ঘোষণা করা হয়েছে। কুরবানি ও হজের মাসেও দানের মর্যাদা অনেক বেশি। তাই দানের ক্ষেত্রে দেরি না করে সাধ্যমতো দান করাকেও উত্তম আমল বলেছেন বিশ্বনবি।

৬. ঈদুল আজহার নামাজ পড়া
ঈদের দিন সকাল সকাল ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। ঈদের দিন সুন্নাতের অনুসরণে নামাজ পড়া কথা বলেছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৭. কুরবানি করা
ঈদের নামাজ পড়েই এ দিন আল্লাহর জন্য পশু কুরবানি করা। কুরবানির ক্ষেত্রে এ কথা স্মরণ রাখা যে, এ কুরবানি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক মহা নির্দশন। কুরবানির পশুর রক্ত, পশম কোনো কিছুই মহান আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। বরং পৌছে বান্দার নিয়ত। সে কারণে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিশুদ্ধ নিয়তে কুরবানি দেওয়া।

কোরবানির দিনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আমল হল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি দেওয়া। এখানে যারা সামর্থ্যবান তাদেরকেই কেবল কোরবানি দিতে বলা হয়েছে। যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের ওপর কখনোই জোর করে কোরবানি দেওয়ার দায়িত্ব আল্লাহ তা’আলা চাপিয়ে দেননি তাই আপনাদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল তারাই কেবল কোরবানি দেবেন। এবং সহি ভাবে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে কুরবানী দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল।

কোরবানীর দিনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ঈদের সালাত আদায় করা। ঈদের সালাত আদায় করার জন্য অবশ্যই আপনাকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এবং সঠিক সময়ে উপস্থিত হয়ে ঈদের সালাত আদায় করা কোরবানি দিনের অত্যন্ত ফজিলত নয় একটি আমল।

সকালে আপনাকে ঘুম থেকে উঠতে হবে এবং সবার প্রথমে চেষ্টা করতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে। আপনি পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে খুব সুন্দর ভাবে গোসল করতে পারেন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় এবং এর সঙ্গে উত্তম সুগন্ধি মেখে পবিত্রতা অর্জন করতে পারেন। এগুলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করতেন এবং আমরা যদি এটা করি তাহলে আমাদের জন্য সুন্নত পালন করা হবে।

কোরবানি দিনে আপনি যখন ঈদগাহে যাবেন তখন অবশ্যই একটি পথে ঈদগাহে যাবেন এবং ভিন্ন পথে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসবেন এবং এটা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করতেন যা আমাদের জন্য সুন্নত করা হয়েছে।

ভোরে দিনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো তাকবির পাঠ করতে করতে কোরবানির ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়া। ঈদুল আযহার নামাজ ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয় এবং আপনি বাড়ি থেকে ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাবেন এটা সুন্নত এবং তার সঙ্গে তাকবীর জোরে জোরে পাঠ করতে করতে যাবেন এটা হচ্ছে আরও একটি সুন্নত।

এছাড়াও কোরবানি দিনে কোরবানির পশু যবে করা ও তার গোস্ত আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া এবং দরিদ্রদের মাঝে দান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। তবে যত দিন যাচ্ছে আমরা এই আমল থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে তাই আমাদের কোরবানি দিনে আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই আমল গুলো মন থেকে করতে হবে যে আমল দ্বারা আমরা আল্লাহতালা সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

আপনারা যারা কোরবানি কে সামনে রেখে বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে নিজের আমলনামা কে সুন্দর করে সাজাতে চাচ্ছেন তারা উপরে উল্লেখিত আমল গুলো খুব সুন্দর ভাবে করতে পারবেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *