মিরাজের আমলসমূহ

শবে মেরাজ মুসলমান জাতির জন্য ঐতিহাসিক একটি রজনী। শবে মেরাজ রাতকে কেন্দ্র করে অনেক বড় একটি ইতিহাস আছে যেটা আমরা সকলেই অবগত আছি। আজকে আমরা আলোচনা করব সেই সবে মেরাজের রজনীকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য যে আমলগুলো নির্ধারিত করে দিয়েছেন সে আমলগুলো সম্পর্কে। ঈমানদার মুমিন ব্যক্তিরা কখনোই কোন সময়কে অবহেলা করে না এবং সব সময় সঠিক সময়ে সঠিক ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করে।

ঠিক যেমন দেখুন যে ফরজ কাজগুলো আমাদের জন্য আল্লাহ তা’আলা নির্ধারণ করে দিয়েছে ঈমানদার মুমিন ব্যক্তিরা অক্ষরে অক্ষরে সেই ফরজ কাজগুলো করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত গুলো পালন করে। তার মধ্যে মহামান্বিত রজনীগুলোর একটি হচ্ছে শবে মেরাজ যেটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রজনী। শবে মেরাজ সম্পর্কে অনেক ইতিহাস আমরা জানি।

শাবান মাসের 14 তারিখ দিবাগত রাতকে বলা হয় শবে বরাত। এরাতেই মূলত আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে পবিত্র কাবা হতে ভূমধ্যসাগরের পূর্বতীর ফিলিস্তিনে অবস্থিত বাইতুল মুকাদ্দাস হয়ে সপ্তাকাশের উপরে সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে ৭০ হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে আজিমে মহান আল্লাহতালার দিদার লাভ করেন। এর সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেন আমাদের প্রিয় নবী।

সবে মেরাজের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইবাদত

আল্লাহ তাআলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং সম্পূর্ণ সৃষ্টির জগতের অপার রহস্য ঘেরা। তিনি অবলক্ষণ করেন সৃষ্টির জগতের সমস্ত কিছুর অপার রহস্য। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সব থেকে সৃষ্টিকারী ঘটনা হচ্ছে মেরাজ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ছাড়া লাভ করতে পারেন যিনি আমাদের প্রিয় নবী। তাই এই শবে মেরাজকে অত্যন্ত মহামান্বিত একটি রজনী হিসেবে ধরা হয়।

শবে মেরাজের নামাজ পড়া সম্পর্কে যে নিয়মগুলো আছে তার মধ্যে হচ্ছে দুই রাকাত নিয়তে কমপক্ষে ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হয়। বিভিন্ন হাদিসে এই সম্পর্কে দিকনির্দেশনা রয়েছে। শবে মেরাজকে কেন্দ্র করে নামাজ পড়তে চাই তারা দুই রাকাত নিয়াতের সঙ্গে সর্বনিম্ন ১২ রাকাত নামাজ পড়তে পারে। এর থেকে অতিরিক্ত যত রাকাত নামাজ আদায় করতে পারবে সেটার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

তবে মনোযোগ সহকারে যদি আমরা নামাজ পড়ি তাহলে হয়তো ১২ রাকাত নামাজ পড়ার সারারাতের জন্য অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে যাবে। এর পাশাপাশি আমাদের নফল রোজা করতে হবে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী আমাদের মেরাজের রাতে নফল ইবাদত করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন”মেরাজের রাতে নফল ইবাদত করো ও দিনে রোজা পালন কর। শুনানে ইবনে মাজাহ।

উপরের হাদিস থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি যে এখানে আমাদের প্রিয় নবী আমাদের মেরাজ উপলক্ষে রাতে নফল ইবাদত এবং দিনের বেলায় রোজা রাখতে আদেশ করেছেন। যদি শবে মেরাজের রোজা নিয়ে কথা বলতে হয় তাহলে অনেকেই জোড়া জোড়া রোজা রাখার চেষ্টা করেন।

শবে মেরাজে নবীজির ইবাদত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “রজব হল আল্লাহর মাস, সাবান হল আমার মাস, রমজান হল আমার উম্মতের মাস,”তিরমিজি। এবং তিনি আরো বলেন “যে ব্যক্তি রজব মাসে ইবাদত দ্বারা খেয়ে চাষ দিল না এবং শাবান মাসে ইবাদতের মাধ্যমে ক্ষেত আগাছা মুক্ত করলো না সে রমজান মাসে ফসল তুলতে পারবে না (বায়হাকী)।

উপরে হাদিসগুলো থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছি যে সাবান মাস কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ ইবাদতের সময়। তাই নবীজি এই মাসকে কখনোই অবহেলা করতেন না এবং এই মাসে যত বেশি পারেন তত বেশি ইবাদত করতেন। আমরাও নবীজির পথ অনুসরণ করবো এবং নবীজি যে ইবাদতগুলো করতেন সেই ইবাদতগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। অবশ্যই শবে মেরাজকে কেন্দ্র করে ইবাদতের পরিধির বৃদ্ধি করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *